হাতের লেখা সুন্দর করার ৭ উপায়
বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার এবং ই-মেইল ব্যবহারের কারণে হাতে লেখার চর্চা কমে গেছে। তবুও, শিক্ষাক্ষেত্রে বা পরীক্ষার খাতায় হাতে লেখা গুরুত্ব কোনো অংশে কমেনি। পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর হাতের লেখা শিক্ষক ও পরীক্ষক-উভয়েরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিছু সহজ কৌশল অনুশীলনের মাধ্যমে হাতের লেখা সুন্দর করা সম্ভব। এমনই কিছু কৌশল তুলে ধরা হলো:
সঠিক কলমের ব্যবহার 1
হাতের লেখার ক্ষেত্রে কলমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেখার সময় এমন কলম বেছে নিতে হবে যা হালকা ও ব্যবহার করা সহজ। অনেকেই অতিরিক্ত ভারী বা কম গতিসম্পন্ন কলম ব্যবহার করেন, যার ফলে হাত দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং লেখা সুন্দর হয় না। একটি হালকা ও আরামদায়ক কলম দিয়ে লিখলে হাতের লেখা স্বাভাবিকভাবে সুন্দর হয়। কলমের ধরন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা হালকাভাবে ধরে লেখা প্রয়োজন। অতিরিক্ত চাপ দিয়ে কলম ধরলে আঙুলে ব্যথা হতে পারে এবং লেখার মান খারাপ হয়ে যায়। তাই কলম হালকাভাবে ধরে,
স্বাভাবিক গতিতে লিখতে হবে।
বর্ণমালার সঠিক অনুশীলন 2
হাতের লেখা সুন্দর করার অন্যতম প্রধান শর্ত প্রতিটি বর্ণ ও অক্ষর সঠিকভাবে লেখা। হাতের লেখার সৌন্দর্য নির্ভর করে প্রতিটি অক্ষরের সঠিক আকার ও বিন্যাসের ওপর। স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ প্রতিটি আধার আলাদা করে পরিচারভীরে দেখার অভ্যাস করতে হবে। যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুত্র বালুকণা একত্রিত হয়ে বিশাল মরুভূমি গঠন করে, তেমনি প্রতিটি অক্ষর সুন্দর হলে পুরো লেখাটাই সুন্দর দেখাবে। শুধু বর্ণমালার আকার নয়, লাইন গ্যাপ ও মাত্রা সঠিক রাখা প্রয়োজন। এ জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় বর্ণমালা অনুশীলনে ব্যয় করলে হাতের লেখার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
সোজা করে লেখা 3
লেখার সময় অনেকেই লক্ষ্য করেন যে তাদের লেখাগুলো বাঁকা হয়ে যায়। বাঁকা লেখার কারণে লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং তা পড়তে অসুবিধা হয়। সোজা লাইন ধরে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রথমদিকে পেনসিল দিয়ে সরলরেখা টেনে লেখা যেতে পারে। এ ছাড়া লেখার সময় শরীরের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে বসে লেখার অভ্যাস করাতে হবে, কারণ লেখা ঠিকঠাক হয় না। লেখার সময় মনোযোগ দিতে হবে যেন প্রতিটি লাইন সোজা থাকে এবং লেখার বিন্যাস সুন্দর হয়।
মাঝারি আকারের অক্ষর ব্যবহার করা 4
হাতের লেখা সুন্দর করতে অক্ষরের আকারও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অক্ষরগুলো খুব ছোট বা খুব বড় হলে তা দেখতেও খারাপ লাগে এবং পড়তে অসুবিধা হয়। তাই অক্ষরের আকার মাঝারি রাখার চেষ্টা করতে হবে। মাঝারি সাইজের অক্ষর দেখতে সুন্দর লাগে এবং পড়ার জন্যও উপযোগী হয়। বড় বা ছোট অক্ষরের পরিবর্তে প্রতিটি অক্ষর যেন পরিমিত আকারে থাকে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মনোযোগ সহকারে ধীরে ধীরে লেখা 5
অনেকেই অতি দ্রুত রাখার চেষ্টাই হাতের লেখার সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে। দ্রুত গতিতে লেখা প্রয়োজনীয় হলেও, হাতের লেখার স্পষ্টতা ও সৌন্দর্য বজায় রাখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত লিখতে গিয়ে অক্ষরগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেলে লেখার মান কমে যায়। তাই দ্রুত লেখার সময়ও পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে ধীরে এবং পরিষ্কারভাবে লেখার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিটি অক্ষর ও শব্দের প্রতি মনোযোগ দিলে হাতের লেখার মান উন্নত হবে।
কাটাকাটি থেকে বিরত থাকা 6
লেখার সময় কাটাকাটি করা বা ওভার রাইটিং করা হাতের লেখার সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। যদি কোনো কিছু কেটে দিতে হয়, তাহলে একবারে সোজা টানে কেটে দেবে। কাটাকাটির ফলে লেখা অপরিস্কার দেখায় ও পড়তে অসুবিধা হয়। তাই হাতের লেখার মান বজায় রাখতে যতটা সম্ভব কাটাকাটি থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিয়মিত অনুশীলন করা 7
হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত অনুশীলন। প্রতিদিন কিছুটা সময় নির্দিষ্ট করে হাতের লেখার অনুশীলন করলে ধীরে ধীরে লেখার মান উন্নত হয়। অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়লে হাতের লেখা আর সুন্দর করা সম্ভব নয়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, যেকোনো বয়সে নিয়মিত চর্চা করলে হাতের লেখা সুন্দর করা সম্ভব। প্রতিদিন অনুশীলনের মাধ্যমে হাতের লেখাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে তোলা যায়।